• মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১০ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]
শিরোনাম:
উখিয়ায় সাংবাদিকের জায়গার মাটি কাটতে বাধা দেয়ায় ভূমিদস্যুদের হামলা রাজাপালং ইউনিয়ন উত্তর শাখা কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন আরজে কামরুল হলদিয়া পালং ইউনিয়ন দক্ষিণ শাখা কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত মহিউদ্দিন সাংবাদিক সরওয়ার আজম মানিকের মায়ের ইন্তেকাল: উখিয়া নিউজ টিভির শোক উখিয়া ডাকঘর বিডি ক্লিন টিমের পরিচ্ছন্নতা অভিযান: অপসারণ দুই টনের ময়লা এনসিপি থেকে পদত্যাগ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর একাত্তরের ভুলের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন জামায়াত আমির চট্টগ্রামে থানায় ঢুকে পুলিশের ওপর হামলা, সাবেক শিবির নেতা আটক উৎসবমুখর পরিবেশে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান: শাহজাহান চৌধুরী বিএনপির আসনভিত্তিক প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত, কক্সবাজার-১ সালাহউদ্দিন আহমেদ

এজাহারে গরমিল: এস আই শের আলী গায়েব করলো ৫৫ হাজার ইয়াবা 

শাহীন মাহমুদ রাসেল, কক্সবাজার / ৩১৭ বার
সময় : বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৫

৩০ সেপ্টেম্বর রাত দেড়টায় উখিয়ার লেঙ্গুরবিলের একটি বসতবাড়িতে অভিযান চালায় উখিয়া থানার এস আই শের আলী। সেই সময় ওই ঘর থেকে ৬ কার্ড (৬০ হাজার) ইয়াবা সহ আবদুল আউয়ালকে আটক করা হয়। কিন্তু ভিন্ন ঘটনাস্থল দেখিয়ে মাত্র ৫ হাজার ইয়াবা সহ তাকে আদালতে পাঠানোয় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

 

আওয়ালের আত্মীয়-স্বজনদের দাবি, অভিযানস্থলও ‘পরিবর্তন’ করে দেখানো হয়েছে। তাকে বাড়ি থেকে আটক করা হলেও মামলায় লেখা আছে, টেকনাফ থেকে আসার সময় উখিয়া কৃষি ব্যাংকের নিচ থেকে আউয়ালকে ধরা হয়। অথচ তার বাড়ি সেই জায়গা থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে।

 

আব্দুল আউয়াল একজন দরিদ্র ব্যাক্তি। এসময় সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, একদল সাদা পোশাকধারী লোক হঠাৎ করেই তার বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তারা কাউকে কিছু বুঝে উঠতে না দিয়েই তাকে জোরপূর্বক বাইরে নিয়ে যায়। উপস্থিত স্থানীয়রা বিষয়টি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ওই দলটি তার সঙ্গে বাড়ি থেকে প্রায় ছয় কার্ড ইয়াবা নিয়ে যায়। তবে ঘটনাস্থলে কোনো সরকারি বাহিনীর উপস্থিতি বা অফিসিয়াল তল্লাশি সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখা যায়নি, যা পুরো ঘটনাকে আরও রহস্যজনক করে তুলেছে। স্থানীয়দের ধারণা, এটি হয়তো কোনো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে সাজানো অভিযানের অংশ হতে পারে।

 

জব্দ তালিকায় দেখা যায়, সেখানে মাত্র পাঁচ হাজার ইয়াবার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, উদ্ধার করা হয়েছিল প্রায় ৬০ হাজার ইয়াবা। শুধু তাই নয়, মাদক উদ্ধারের স্থানটিও ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তন করেছেন এসআই শের আলী, যাতে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়। আশ্চর্যের বিষয়, এত বড় মাদক উদ্ধারের পরও পুলিশ কোনো প্রেসবিজ্ঞপ্তি দেয়নি বা গণমাধ্যমকে অবহিত করেনি- যেখানে সাধারণত পাঁচশ পিস ইয়াবা উদ্ধার হলেও সাংবাদিকদের ডেকে প্রচার চালানো হয়। এই নীরবতা পুরো ঘটনাটিকে সন্দেহজনক করে তুলেছে।

 

স্থানীয়দের মতে, তিনি ছিলেন ইয়াবা সিন্ডিকেটের বাহক। প্রকৃত মালিক মরিচ্যা সিএনজি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান জিকু ও তার সহযোগী কামাল উদ্দিন। সম্পর্কের সূত্রে আউয়াল আসলে জিকুর চাচা। পুলিশি অভিযানে এই চালান ধরা পড়ার পর জিকু পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে পুরো বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করেন।

 

স্থানীয়দের ধারণা, জিকু ও কামাল বহুদিন ধরে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। সাম্প্রতিক টানাপোড়েনে জিকু নিজের চাচাকে বলি দিয়েছেন।

 

ইয়াবাসহ আউয়াল আটক হওয়ার পর থেকে আনিসুর রহমান জিকু ও কামাল উদ্দিনের হঠাৎ উত্থান নিয়ে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা।কামালের কোনো স্থায়ী পেশা না থাকলেও এখন তিনি কোর্টবাজার এলাকায় একাধিক জমির মালিক। অন্যদিকে, জিকুর মালিকানায় রয়েছে দুটি ট্রাক ও কয়েকটি সিএনজি। স্থানীয়দের অভিযোগ- ইয়াবা ব্যবসার টাকায় তারা গড়ে তুলেছেন কোটি টাকার সাম্রাজ্য।

 

আব্দুল আউয়ালের স্ত্রী তৈয়বা বলেন, ‘রাত একটা বিশ মিনিটে ৫-৬ জন লোক সিভিল পোশাকে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। পরে শুনি তিনি উখিয়া থানায় আছেন।’

 

আওয়ালের আত্মীয় আব্দুল হক বলেন, ‘যেখানে ধরা হয়েছিল সেটা মামলায় লেখা জায়গার সঙ্গে মিলছে না। এটাই প্রমাণ করে সব বানানো।’

 

উখিয়ার ব্যবসায়ী জসিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পুলিশ যদি ইয়াবার চালান গায়েব করে, তাহলে মাদকবিরোধী যুদ্ধ কোথায় দাঁড়ায়? যাদের বিরুদ্ধে লড়াই হওয়ার কথা, তারাই তো এখন রক্ষক।’

 

স্থানীয় সমাজকর্মীদের অভিযোগ, এসআই শের আলী থানায় যোগদানের পর থেকেই টাকার বিনিময়ে মামলা বানানো, ইয়াবা গায়েব, ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন।

 

উখিয়ার সংবাদকর্মী একজন বলেন, ‘তিনি এখন পুলিশের পোষাকে দানব হয়ে উঠেছেন। টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না।’

 

পুলিশের হাতে মাদক জব্দ মানেই এখন নতুন বাণিজ্যের সুযোগ। এমন মন্তব্য করে স্থানীয়রা জানান, লেঙ্গুরবিল এলাকায় একটি বড় ইয়াবা সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। এই চক্রে রয়েছেন ‘কুখ্যাত ডাকাত তোফায়েল’, ‘ইয়াবা রুবেল’, ‘৩৭ কামাল’ ও ‘ইয়াবা জসিম’। তারা সীমান্ত থেকে চালান এনে পাহাড়ি পথে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে। স্থানীয়দের দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশও এ চক্রের সঙ্গে আঁতাত করে চলছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই শের আলী বলেন, ৫ হাজার ইয়াবাসহ একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে ৬০ হাজার ইয়াবার প্রশ্নে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনি কি ইয়াবা ব্যবসায়ী? এরপর তিনি প্রতিবেদককে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে ফোন কেটে দেন।

 

অনেকটা মাদক গায়েবের পক্ষে সাফাই গেয়ে উখিয়া থানার ওসি জিয়াউল হক বলেন, ‘তার কাছ থেকে ৫ হাজার ইয়াবা পাওয়া গেছে।’ কেন বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।

 

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ বলেন, ‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর