কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালীর রহমতের বিল সীমান্তঘেঁষা একটি গ্রাম। এখানেই গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট।
স্থানীয়রা বলছেন, স্থায়ী নেতৃত্ব দিচ্ছেন বড় ভাই জিয়াবুর রহমান টিপু; তার ছায়ায় দুই ভাই তারেকুর রহমান বাঁশি ও উকিল আহমদ মাদক ব্যবসায় সক্রিয়ভাবে জড়িত। এলাকার এমন পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয়রা গভীর উদ্বিগ্ন; তারা বলছেন, থাইংখালি আজ শুধু স্থানীয় সমস্যাই নয়, দেশের জন্যও এক বড় হুমকি হয়ে উঠছে।
টিপু: সিন্ডিকেটের মূল নিয়ন্ত্রক
স্থানীয় সূত্র ও অভিযোগের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে, জিয়াবুর রহমান টিপু তিন ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও নেটওয়ার্কের মূল কুশীলব। দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থেকেও সাম্প্রতিক সময়ে অস্ত্র ব্যবসাতেও তার নাম জড়িয়েছে। একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও আদালতের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে সে বেরিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক একটি বিজিবি অভিযানে তার কাছ থেকে অস্ত্র জব্দ হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, টিপু মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয়ে চার্জশিট থেকে নিজের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে। তার বাবার মালিকানাধীন বড় মাছের ঘেরটি স্থানীয়রা বলছেন, এখন ইয়াবা নেটওয়ার্ক পরিচালনার আড়াল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এখান থেকেই সীমান্ত পারাপারের চালান সমন্বয় করা হয়।
বাঁশি: যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হলেও সক্রিয়
তারেকুর রহমান বাঁশি—যিনি আগে ইয়াবা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন—দীর্ঘ কারাভোগের পর সম্প্রতি মুক্তি পেয়ে ফের পুরনো কার্যকলাপে সক্রিয় হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ি পথ ব্যবহার করে ইয়াবা চালান আনা-নেওয়ার কাজে তার সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্থানীয়রা বলছেন। বাঁশির মুক্তির পরেও তার ওপর লাগাম টানতে সক্ষম হচ্ছে কি না এটাই স্থানিরা জানতে চান।
উকিল আহমদ: আত্মসাৎ ও ভাইরাল ছবি
এই সিন্ডিকেটের কনিষ্ঠ ভাই উকিল আহমদকে ঘিরে এলাকায় বেশ ভীতি-অভিযোগ ছড়িয়ে আছে। স্থানীয়দের কথায়, সীমান্ত থেকে আসা এক চালান থেকে সে আগে ৩০ হাজার পিস ইয়াবা আত্মসাৎ করেছিল। এই ঘটনার খবান লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা হাতে নিয়ে ফটোসেশন করে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি করেছে। তবু এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
রাজনৈতিক প্রভাব ও আশ্রয়দান
তিন ভাইয়ের পিতা কামাল মিয়াজী ছিলেন এলাকার সাবেক ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব ও পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে ছেলেরা মাদক ব্যবসা পরিচালনা করেছে। বাবার প্রভাব, মাছের ঘেরের আড়াল এবং সীমান্তবর্তী ভৌগোলিক সুবিধা এই তিনটি মিলিয়ে তারা সহজেই চালান আনা-নেওয়া, ভাণ্ডার স্থাপন এবং নেটওয়ার্ক বিস্তারের কাজ চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, টিপুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই চক্রের ছত্রছায়ায় অনেক যুবক এখন ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। আগে যারা কৃষিকাজ, মৎস্যচাষ বা দিনমজুরিতে নিয়োজিত ছিল, তারা এখন দ্রুত টাকা রোজগারের লোভে মাদক পরিবহন ও বিক্রয়ে যুক্ত হচ্ছে। এর ফলে গ্রামটি ধীরে ধীরে ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হচ্ছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
স্থানীয়দের একটাই দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন দ্রুত ও কার্যকরভাবে টিপু এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়: সাজাপ্রাপ্ত একজন ফিরলেও আবার সক্রিয় হতে পারছে কেন? আর যে সূত্রগুলো লোকালয়ে ছড়িয়ে রয়েছে।
সীমান্ত থেকে আত্মসাৎ, মাছের ঘেরের ব্যবহার, রাজনৈতিক আশ্রয়, এসব জায়গায় কি তদন্ত করা হচ্ছে? স্থানীয়রা বলছেন, যদি অবিলম্বে তদন্ত না হয় এবং ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে থাইংখালি গ্রাম আরো গভীরভাবে মাদকের দখলে পড়বে এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের নেটওয়ার্ক আরও বিস্তৃত হবে।