উখিয়ার তেলখোলা গ্রামে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর বসবাসের ইতিহাস প্রায় ৭৫ বছরের পুরোনো। প্রধান সড়ক থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে সবুজ প্রকৃতির মাঝে দেখে মেলে গ্রামটির। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে চাকমারা পার্বত্য অঞ্চলের বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকে এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন। শুরু থেকেই স্থানীয় বাঙালিদের পাশাপাশি তারা এই পাহাড়ি জনপদে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে জীবনধারণ করে আসছিলেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বাঙালি ও চাকমা সম্প্রদায়ের মধ্যে মানসিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে; বাড়তে থাকে দূরত্ব ও সৃষ্টি হয় নানান সমস্যা।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর কয়েকজন চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা নারী-পুরুষের বিরুদ্ধে একটি মহিষের পা কেটে নেওয়ার অভিযোগ তোলেন স্থানীয় একজন বাঙালি। এর আগেও গহিন পাহাড়ে খাবারের সন্ধানে চড়তে যাওয়া একাধিক গরু-মহিষ চুরি ও জবাই করে খেয়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ সবকিছুই মিথ্যা দাবি করেছেন অভিযুক্তরা। তাদের দাবি, মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে তাদেরকে মারধর করে তুলে আনা হয়।
এ ঘটনায় বাদী উখিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন সূর্য কুমার তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি দাবি করেন, প্রভাবশালী বাঙালি এবং কিছু ভাড়াটে রোহিঙ্গারা ধারালো দা, কিরিচ, লোহার রড, শাবল, লাঠি ও দেশীয় অবৈধ অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে অনেকে গুরুতর আহত হন। হামলাকারীরা ভুক্তভোগীদের ফসলি জমি, ধানখেত, জুমের ফসল, সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, ব্যাটারি, স্বর্ণালংকার, বৌদ্ধ আসন এবং গৃহস্থালির নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রী ভাঙচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যায়। একই সঙ্গে গৃহপালিত গরু ও ছাগল চুরি করে নেয় এবং কয়েকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হত্যার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় সর্বমোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৮ লাখ টাকা বলে প্রাথমিকভাবে নিরূপণ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাঙালিরা দাবি করছেন, তাদের গরু-মহিষের পাল পাহাড়ে গেলে ধরে ধরে খেয়ে ফেলেন চাকমারা। এ ছাড়া গহিন পাহাড়ের পাদদেশে চাকমারা ভারী অস্ত্রশস্ত্র মজুত রেখে যুবকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে এর সত্যতা যাচাই করতে বললেন চাকমা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা।
এ বিষয়ে স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার কামাল উদ্দিন দাবি করেন, মহিষের ঘটনা নিয়ে দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
তবে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
এ ঘটনায় দুই পক্ষকে মিলিয়ে দিতে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী।